top of page
  • Hasan Mahmud

বাঙালি মুসলমানের মনঃ শিক্ষিত বাঙালির আত্বস্থ বর্ণবাদের (internalized racism) আলাপ








সম্প্রতি আমেরিকায় 'ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স' আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদবিরোধী সামাজিক আন্দোলন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় দেশে দেখা যায় সেলিব্রিটিরাও বর্ণবাদবিরোধী এই আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সেই সেলিব্রিটিদের কেউ কেউ আবার নিজেরাই বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ছিল প্রিয়াঙ্কা চোপরার বিএলএম (Black Life Matters) আন্দোলনে যোগ দেওয়া এবং তারপরে দক্ষিণ এশীয় এক্টিভিস্টদের দ্বারা বর্ণবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া [১]। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, গায়ের রং ফর্সা করার প্রসাধনী দ্রব্যের মডেল হওয়া, যা একধরনের বর্ণবাদ হিসেবে স্বীকৃত। প্রশ্ন হলো, অ-সাদারা যে নিজেদের গায়ের রং এবং অন্যান্য শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো সাদাদের অনুরূপ করতে চায়, তা তো তারা স্বেচ্ছায় করে। এরমধ্যে দিয়ে যে নিজেকে এবং নিজের দল/গোষ্ঠী/সম্প্রদায়কে হেয় করা হয়, অনুচ্চারে একধরনের ঘৃণা প্রকাশ করা হয়, তবুও তারা কেন নিজেদের ওপর এমন বর্ণবাদী আচরণ করে? সমাজবিজ্ঞানী তানিয়া গোলাশ-বোজা (Tania Golash-Boza) বর্ণ (Race) বলতে একটা সামাজিক ধারণাকে বোঝান, যা সাদৃশ্যপূর্ণ দৈহিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং একই বংশধারার ভিত্তিতে জনগোষ্ঠীসমূহকে তুলনামূলক অসম কাঠামোগত অবস্থান বরাদ্দ করে। আর বর্ণবাদ (Racism) হলো, দৈহিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে জনগোষ্ঠীগুলোকে সমাজের উচ্চ ও নিম্নস্তরে গণ্য করার এবং সেই অনুযায়ী সামাজিক মেলামেশা পরিচালিত করার মতবাদ [২]। বর্ণবাদের মধ্যে তিনটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:


(১) একটা দল বিশ্বাস করে যে, তারা অপর দলটির চেয়ে শ্রেষ্ঠতর,

(২) নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ বলে বিশ্বাস করা দলটির বর্ণবাদী আচরণ করার সক্ষমতা এবং

(৩) দুইটি দলের বাইরে বৃহত্তর সামাজিক পরিসরে অন্যান্য দলকেও বর্ণবাদের মাধ্যমে প্রভাবিত করা [৩]।


এখানে উল্লেখ্য যে, বর্ণবাদী ব্যক্তি বা দল ক্ষমতাসীনদের মধ্যে থাকে। এই থেকে প্রায়শই একটা ভুল অনুমানের জন্ম হয় যে, বর্ণবাদ বুঝি ব্যক্তির ইচ্ছাধীন (Intentional), যেখানে ব্যক্তি সচেতনভাবে বর্ণবাদী আচরণ করে। বর্ণবাদকে ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও সামাজিক দলের আচরণের মধ্যে চিহ্নিত করা গেলেও সমাজবিজ্ঞানীরা বর্ণবাদের ভিত্তি হিসেবে ব্যক্তির মন নয়, বরং বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে দলসমূহের অসম অবস্থানকে বিবেচনা করেন [৪]। তবে এই বিষয়টি আরেকভাবেও অনুধাবন করা যায়। ভালো করে খেয়াল করলে আমরা দেখতে পাব যে, প্রায়শই বর্ণবাদের আক্রান্ত ব্যক্তি এবং দল নিজেদেরকে নিয়ে প্রচলিত বর্ণবাদী কুধারণাকে (Stereotype) স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেয়, তথা আত্মীকরণ (Internalize) করে থাকে।


সমাজবিজ্ঞানীরা দাবি করেন যে, নেতিবাচক পূর্বধারণার (Stereotype) আত্মীকরণ অবধারিতভাবে আত্মস্থ বর্ণবাদে (Internalized Racism) গিয়ে ঠেকে, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং দল নিজেরাই মনের অজান্তে নিজেদের ওপর বর্ণবাদী আচরণে লিপ্ত হয়। যেমন, অ-সাদা দেশগুলোতে বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে রং ফর্সাকারী প্রসাধনী দ্রব্যের ব্যবহার, ইংরেজি বা অন্যান্য কলোনিয়াল ভাষায় শিক্ষার প্রতি আগ্রহ, সাদা মানুষদেরকে স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের তুলনায় অধিক সক্ষম অনুমান করা ইত্যাদি। এইসবের প্রধান কারণ হিসেবে সামাজিক বিজ্ঞানীরা নিজের সম্প্রদায়কে নিয়ে হীনম্মন্যতা এবং আত্মঘৃণার উল্লেখ করেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় একটা স্কুলে কালো-আমেরিকান এক ছাত্রের উদাহরণ দিয়ে Huber, Hohnson and Kohli (2006) [৫] ব্যাখ্যা করেন আত্মস্থ বর্ণবাদ (Internalized Racism)। ক্যালিফোর্নিয়ার সেই কালো ছাত্রটি অঙ্কে তার দুর্বলতা জন্য প্রাথমিক স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক না থাকা এবং অঙ্কের পাঠ্যবই কিনতে না পারার (তথা, পারিবারিক দারিদ্র্য) বদলে নিজের কম বুদ্ধিমত্তাকেই দায়ী মনে করেছিল। এই গবেষকরা আমেরিকার স্কুলের শিক্ষব্যবস্থায় সাদা আধিপত্যবাদী (White Supremacist) শিক্ষক, সিলেবাসের মধ্যে অ-সাদা আমেরিকানদের কম উপস্থিতি (Less Representation) এবং অ-সাদাদের জন্য স্কুলে অপ্রতুল শিক্ষা উপকরণের মতো কাঠামোগত ভিত্তির মধ্যে বর্ণবাদের কারণ নির্ণয় করেছেন। তারা মনে করেন যে, স্কুলের অ-সাদা ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থাকে বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়ার ফলে বর্ণবাদী কাঠামোকে দেখতে ব্যর্থ হয় এবং ফলস্বরূপ স্কুলের ফলাফলে পিছিয়ে পড়াকে নিজেদেরই অযোগ্যতা হিসেবে চিহ্নিত করে।


তাহলে আত্মস্থ বর্ণবাদ (Internalized Racism) কী? এটি হলো সেইসব কুধারণাকে (Stereotype) সঠিক হিসেবে গ্রহণ করে নেওয়া, যা নিজের দল/গোষ্ঠী/সম্প্রদায়কে ঊনমানুষ, পশ্চাৎপদ, অসমর্থ এবং সমাজের জন্য বোঝা হিসেবে চিত্রায়ণ করে [৬]। বর্ণবাদের শিকার দলের মধ্যে এই ধরনের বর্ণবাদ নিজেদের দল/গোষ্ঠীগত পরিচয়ের ক্ষেত্রে আত্মঘৃণার জন্ম দেয় [৭]। নিজের এবং নিজের দল/গোষ্ঠী/সম্প্রদায়ের সম্পর্কে হীনম্মন্যতার জন্ম দেওয়ার পাশাপাশি এই আত্মস্থ বর্ণবাদ সমাজের নানান সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিভাজন এবং বিদ্যমান নিপীড়ন-নির্যাতনকে আরও বৃদ্ধি করে [৮]।


আমি মনে করি “বাঙালি মুসলমানের মন” প্রবন্ধে আহমদ ছফার অঙ্কিত বাঙালি মুসলমানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণবাদী। ওপরে আত্মস্থ বর্ণবাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনার ভিত্তি আমি এই নিবন্ধে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি কেন আহমদ ছফার বর্ণনাকে আমি বর্ণবাদী মনে করি এবং কেন তিনি নিজেকে বাঙালি মুসলমান হিসেবে পরিচিত করার পরেও এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ে এহেন বর্ণবাদী চিন্তাধারা পোষণ করেছেন।



আহমদ ছফার সব থেকে জননন্দিত এবং বহুল পঠিত প্রবন্ধটি হলো “বাঙালি মুসলমানের মন (১৯৭৬)”। অন্য অনেকের মতোই আমার কাছেও এই রচনাটিকে মনে হতো বাংলা ভাষায় লেখা অন্যতম সেরা প্রবন্ধ। আজ থেকে দশ বছর আগেও ছফার এই বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে আলাপে অংশ নিতাম [৯]।  কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে পিএইচডি করতে গিয়ে জাতি, জাতীয়তা, বর্ণবাদ এবং সেইসাথে ইতিহাস গবেষণার পদ্ধতি নিয়ে পড়াশোনার পর ছফার বক্তব্যের কিছু কিছু বিষয়ে মনের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দেওয়া শুরু হলো। বাস্তবতা (Ontology) আর জ্ঞানচর্চা-বিষয়ক (Epistemology) নানান অনুমান আর প্রতিনুমানের মধ্য দিয়ে এই প্রবন্ধ পুনর্পাঠ করতে গিয়ে উপলব্ধি করি পেশাগত দায়ের সাথে ছফার প্রতি ব্যক্তিগত মুগ্ধতার দ্বন্দ্ব। প্রায় এক যুগ ধরে মনের মধ্যে সব থেকে প্রিয় স্থানে রাখা প্রবন্ধটির ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে এর মধ্যে বাঙালি মুসলমানের যে চিত্র পাই, তা মোটেও সুখকর কিছু নয়।


কাহিনি হিসেবে ট্র্যাজেডি আর চরিত্র হিসেবে ট্র্যাজিক নায়ক-নায়িকারা সব সময়ই আমাদের সমাজে জনপ্রিয়। কারবালায় পরাজিত ইমাম হোসেন থেকে শুরু করে পলাশীতে নবাব সিরাজ, শরৎসাহিত্যের দেবদাস—সকলেই গণমানুষের হৃদয়ে স্থান পেয়েছে। এইসব উপাখ্যানে নায়কের বঞ্চনা আর ত্যাগের দুঃখে ব্যথিত আমাদের মন সব সময় অন্যায়, অনাচার আর অমানবিকতার জন্য দায়ী করেছে অপরপক্ষ তথা ভিলেনকে। আর এই করতে গিয়ে আমরা কদাচিৎ লক্ষ করি নায়কের দুর্বলতা। ক্ষমতায় তুলনামূলকভাবে প্রবল প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় নায়কের অক্ষমতাও তার প্রতি আমাদের অনুরাগ, মমতা আর সহানুভূতি বৃদ্ধি করে। “বাঙালি মুসলমানের মন” প্রবন্ধে ছফা বাঙালি মুসলমানের যে চিত্র এঁকেছেন, তা আদতে এমন একজন ট্র্যাজিক নায়কের মতোই। ছফা এদেরকে পরিচিত করাচ্ছেন এইভাবে—‘ইতিহাসের শুরু থেকেই বাঙালি মুসলমান প্রবল পরাক্রান্ত আর্য সমাজের কঠোর জাতিভেদ প্রথার বলি হয়ে সমাজের নিচুতলায় স্থান লাভ করে। সংখ্যায় অধিক হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতায় খাটো বিধায় তারা কোনোরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ পেত না। আর্যদের অধীনে এহেন দুর্দশা থেকে মুক্তির আশায় তারা প্রথমে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে। এরপর বাংলায় মুসলমান শাসনের সূচনা হলে তারা আবার ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করে।’ অর্থাৎ, আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দুর্দশা থেকে মুক্তির আশায় বাঙালি মুসলমান বারবার ধর্ম পরিবর্তন করেছে। ঠিক যেভাবে কারবালার কাহিনি ইমাম হোসেনের জন্য, পলাশীর কাহিনি নবাব সিরাজের জন্য আর দেবদাস উপন্যাসের কাহিনি দেবদাসের জন্য আমাদের হৃদয় কাঁদায়, একইভাবে ছফার বর্ণনা বাঙালি মুসলমানের প্রতি আমাদের মনকে আর্দ্র করে, তাদের কষ্টের সমব্যথী করে, তাদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় শরিক হতে উদ্বুদ্ধ করে।


কিন্তু এরপরে আহমদ ছফা বাঙালি মুসলমানের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের রূপরেখা অঙ্কন করেন, তা এই জনগোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতির বদলে জাগিয়ে তোলে করুণা এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিরক্তি ও ঘৃণা। কারণ, যেই দুর্দশার কারণের বাঙালি মুসলমানের নানান ভোগান্তি, যার জন্য এদের প্রতি পাঠকের মনে সহানুভূতি, তার দায়ও এই বাঙালি মুসলমানেরই। ছফার বর্ণনায় বাঙালি মুসলমান সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলোকে সংক্ষেপে নিম্নরূপে বলা যায়ঃ


১। বাঙালি মুসলমান বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে অপুষ্ট, অতএব পরনির্ভরশীল,

২। বাঙালি মুসলমান স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে অক্ষম বিধায় রক্ষণশীল এবং প্রতিক্রিয়াশীল,

৩। বাঙালি মুসলমান নতুন চিন্তাধারাকে গ্রহণ করতে অক্ষম; ফলে উদ্ভাবনের বদলে অতীতকে আঁকড়ে থাকতে সচেষ্ট,

৪। বাঙালি মুসলমান আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান ও কৃৎকৌশলের উন্নতির সুবিধাভোগী, কিন্তু সেখানে নিজে কোনোরূপ অবদান রাখতে অক্ষম বিধায় গোঁজামিল দিয়ে সেই অক্ষমতাকে ঢাকার প্রয়াস পায়।

৫। “বাঙালি মুসলমানের মন” অনিবার্যভাবেই আটকে আছে এক “প্রাগৈতিহাসিক যুগের আদিম কৃষিভিত্তিক কৌমসমাজে” যা অনিবার্যভাবেই হিন্দু-বিদ্বেষী এবং যেখানে যুক্তি, সৃষ্টিশীলতা আর বিজ্ঞানচেতনার প্রবেশ ঘটেনি।

৬। বাঙালি মুসলমান সমাজের এহেন অনড়, অচল আদিম অবস্থার জন্য দায়ী তাদের জাতিসত্তাগত (বাঙালি) বা ধর্মীয় (মুসলমান) পরিচয় নয়, বরং “একটি ঐতিহাসিক পদ্ধতি” (সলিমুল্লাহ খানের মতে এটি ছিল দীর্ঘদিন ব্যাপী বাঙালি সমাজে বিদ্যমান বর্ণপ্রথা)।


এইখানে ছফার বয়ানে বাঙালি মুসলমানকে প্রথমে দেখতে পাই অসহায়, নির্যাতিত এবং মুক্তিকামী একটা জনগোষ্ঠী হিসেবে, যারা সহজেই পাঠকের মনে সহানুভূতির উদ্রেক করে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার দেখি, এই জনগোষ্ঠী নিজেরাই তাদের নিজেদের দুর্দশার জন্য দায়ী। ফলে তাদের প্রতি যে সহানুভূতি জন্মেছিল, তা কর্পূরের মতো উড়ে গিয়ে সেখানে জন্মায় বিরাগ। অর্থাৎ, সাহিত্যিক ছফা যখন বাঙালি মুসলমানকে নিয়ে লেখা শুরু করেছেন, তখন তার মধ্যে দুর্বলের প্রতি মমতা, মুক্তিকামী জাতির প্রতি সহানুভূতি এবং সমর্থন দেখি। এখানে ছফার মানবীয় আবেগই প্রধান। কিন্তু এই জনগোষ্ঠীর দুর্দশার কারণ অনুসন্ধান করতে আহমদ ছফাকে দেখি পেশাদার সমাজ গবেষকের মতোই নিরাবেগ, নির্মোহ। এই সমাজ নিয়ে গবেষণায় বিদ্যমান তথ্যভান্ডার পুথিসাহিত্যের পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি মুসলমানের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করেছেন, সেখানে এদের প্রতি ছফার সহানুভূতির স্থলে দেখি সমাজ গবেষকের হাতে উন্মোচিত কঠিন বাস্তবতা, দেখি বাঙালি মুসলমানের নানাবিধ চারিত্রিক দুর্বলতা, যা তাদেরকে নানান দুর্ভাগ্যে নিপতিত করেছে। এই প্রবন্ধে স্পষ্টতই ছফার দুই রূপ দেখতে পাই—মানবীয় আবেগ আর দুর্বলের প্রতি সহানুভূতিশীল সাহিত্যিক এবং নির্মোহ সমাজ গবেষক।


আহমদ ছফার মানবীয় গুণাবলি এবং দুর্বলের প্রতি পক্ষপাত দেখি তার সমস্ত লেখালেখিজুড়েই। সমাজের নানান অসংগতি, দুর্নীতি, রাজনৈতিক নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা ইত্যাদি নিয়ে নানান সময়ে সত্য উচ্চারণের মধ্য দিয়ে ছফার মধ্যে আমি লক্ষ করি একটি সাম্যবাদী ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনের অদম্য আকাঙ্ক্ষা। বাঙালি মুসলমান সমাজ নিয়ে জ্ঞানচর্চায় আহমদ ছফার প্রবন্ধটি বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। যেমন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বিচারপতি হাবিবুর রহমান, সলিমুল্লাহ খান-সহ [১০] আরও অনেকে এই প্রবন্ধকে গত শতাব্দীতে বাংলা ভাষায় রচিত শ্রেষ্ঠ ১০টি রচনার একটি মনে করেন। ৭০ দশকের শেষভাগে রচিত এই প্রবন্ধ আজও বাঙালি মুসলমানবিষয়ক আলোচনাকে প্রভাবিত করে। যেমন, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবরে যুবায়ের আহমদ “বাঙালি মুসলমানের মন কি বদলেছে?” [১১] শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন, যেখানে তিনি আহমদ ছফার বর্ণিত বাঙালি মুসলমান সমাজকে এখনও একই রকম অবস্থায় খুঁজে পান, যারা নিজেদের ভালো-মন্দ নিরূপণে অক্ষম এবং সেজন্য একটা উন্নত রাষ্ট্র নির্মাণে ব্যর্থ। একইভাবে ঢাকার হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১ জুলাই ৭১ টিভি একটি টকশো সম্প্রচার করে “বাঙালি মুসলমানের মন” শিরোনামে, যেখানে এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে একটা ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে বাঙালি মুসলমানের ব্যর্থতা এবং ছফার বর্ণিত সমস্যাকে কারণ হিসেবে উপস্থাপনের প্রয়াস লক্ষণীয়।


কেবল গণমাধ্যমেই নয়, একাডেমিক গবেষণা এবং প্রকাশনাতেও এই প্রবন্ধকে তথ্যসূত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয় [১২] [১৩]। অর্থাৎ, আহমদ ছফার এই প্রবন্ধ গণমাধ্যমে এবং একাডেমিক গবেষণায়ও বাঙালি মুসলমানবিষয়ক জ্ঞানের আকর হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং স্বীকৃত।


আহমদ ছফার এই ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ প্রবন্ধটি প্রকাশের পরপরই এবনে গোলাম সামাদ (১৯৭৬) এর মধ্যকার তত্ত্বীয় ও তথ্যগত ক্রুটিগুলো চিহ্নিত করেন [১৪]। যেমন, বাঙালি মুসলমানের সাথে আর্য জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক বৈসাদৃশ্য, আর্যপূর্ব বাংলায় উন্নত সভ্যতার অবস্থিতি, নিম্নবর্ণের হিন্দু থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার অনৈতিহাসিকতা ইত্যাদির উল্লেখ করে এবনে গোলাম সামাদ বাঙালি মুসলমানের উদ্ভব-সংক্রান্ত আহমদ ছফার বয়ানকে ভুল প্রতিপন্ন করেন। তিনি আহমদ ছফার বক্তব্যের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্রের হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণার উপস্থিতির কথাও উল্লেখ করেন। তবে এই সমালোচনাটি আহমদ ছফার জনপ্রিয়তার নিচে দীর্ঘদিনের জন্য একপ্রকার চাপা পড়ে যায়।


সম্প্রতি আহমদ ছফার আলোচ্য প্রবন্ধটির সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করার ক্ষেত্রে বাঙালি জাতীয়তাবাদের মধ্যকার হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাকে বিবেচনা করা জরুরি। ফারুক ওয়াসিফ “সাম্প্রদায়িকতার বীজ বনাম ধর্মনিরপেক্ষতার গণিত” (২০১২) শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় রিডিং ক্লাবের আয়োজিত ৪৩তম গণবক্তৃতায় বঙ্কিমচন্দ্রের বাঙালি জাতির ইতিহাসবিষয়ক আলোচনার মধ্যে চিহ্নিত করেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের মধ্যকার সাম্প্রদায়িক ধারণাগুলোর সূচনা। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের ৪০২তম সাপ্তাহিক পাবলিক লেকচারে (২০২১) আনন্দমঠ উপন্যাসের সূত্র ধরে আলোচনা করেন কীভাবে বঙ্কিমচন্দ্র হিন্দুধর্মের ওপর ভিত্তি করে একটা নতুন জাতীয়তাবাদের সূচনা করেছেন। তিনি সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করেছেন কীভাবে বঙ্কিমচন্দ্র হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সম্মিলিত ইংরেজবিরোধী আন্দোলনগুলোর বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে সেখানে শুধু হিন্দুদেরকে বাঙালি জাতি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন এবং একই সাথে জাতীয় শত্রু হিসেবে নির্মাণ করেছেন সেসময়কার আধিপত্যকারী বহিরাগত ইংরেজ উপনিবেশিক শাসনের বদলে ইংরেজ-পূর্ব মুসলমান শাসনকে। অর্থাৎ, বাঙালি জাতির ইতিহাস রচনা করার ডাক দিয়ে বঙ্কিম তার উপন্যাস এবং প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে যে বাঙালি জাতির চিত্রকল্প প্রদান করেন, সেখানে বাঙালি শুধু আর্যরক্তের উত্তরাধিকারী সনাতন তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। আর বাঙালি মুসলমানকে তিনি চিত্রায়িত করেছেন বহিরাগত, অশিক্ষিত এবং অতীতমুখী হিসেবে, যারা সনাতন ধর্ম এবং বাঙালি সমাজের মধ্যে একধরনের বিকৃতি ঘটিয়েছে।


আহমদ ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ প্রবন্ধ যে আদতে বাঙালি মুসলমান সমাজের একটা বিকৃত চিত্রায়ণ তা নিয়ে প্রথমে একটা বিশদ ব্যাখ্যা পাওয়া যায় সংবিতের সাথে ফারুক ওয়াসিফের “আহমদ ছফার মন ও ‘বাঙালি মুসলমান’ (২০২০)” শীর্ষক একটি আলোচনায়। এইখানে ফারুক ওয়াসিফ বাঙালি মুসলমান সমাজকে আহমদ ছফার মধ্যে একটা দ্বন্দ্বের উপস্থিতি লক্ষ করেন। আহমদ ছফা যেখানে বাঙালি মুসলমান সমাজকে একধরনের ট্রমার মধ্যে থাকার জন্য পশ্চাৎপদ, প্রগতিবিমুখ এবং অনাধুনিক জনগোষ্ঠী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, ফারুক ওয়াসিফ ফ্রয়েডীয় মনো-বিশ্লেষণের কাঠামোর মধ্য দিয়ে আহমদ ছফার মধ্যেই সেই ট্রমার উপস্থিতি চিহ্নিত করেছেন। তিনি আহমদ ছফার মধ্যে বাঙালি মুসলমান সমাজের প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বে ইউরোপীয় যুক্তিবাদের কাঠামো অনুসরণ করার কারণে পুথিসাহিত্যের তথ্যের বিকৃতি, ইতিহাসের ভুল উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা লক্ষ করেন। ফারুক ওয়াসিফ দাবি করেন, বাঙালি মুসলমান হিসেবে নিজের জাতির শ্রেষ্ঠ কীর্তিগুলোকে ধারণ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য আহমদ ছফার মধ্যে হীনম্মন্যতা ছিল, যার কারণে তিনি পুরো বাঙালি মসুলমান সমাজকেই একটা হীনম্মন্য সমাজ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন তার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ রচনায়।


ফারুক ওয়াসিফের এই বিশ্লেষণের পরপরই মোহাম্মদ আজম “'বাঙালী মুসলমানের মন' ও বাঙালি মুসলমানের ইতিহাস প্রণয়নের সংকট (২০২১)” শীর্ষক আলোচনায় সাহিত্য পর্যালোচনার কাঠামোর মধ্যে আহমদ ছফার প্রবন্ধটির পদ্ধতিগত এবং তত্ত্বীয় সীমাবদ্ধতাগুলো ব্যাখ্যা করেন। তিনি আহমদ ছফার এই রচনার মধ্যে বাঙালি মুসলমান সমাজকে অপরায়ন (Othering) করে এমন কতগুলো প্রভাবশালী ধারণার উপস্থিতিও চিহ্নিত করেন। তিনিও ছফার মধ্যে বাঙালি মুসলমান সমাজের জন্য কল্যাণ কামনা লক্ষ করেছেন। কিন্তু ফারুক ওয়াসিফ যেখানে মনো-বিশ্লেষণের মাধ্যমে ছফার নিজের হীনম্মন্যতার মধ্য দিয়ে বাঙালি মুসলমান সমাজের দুর্বলতাগুলোর আবিষ্কারকে ব্যাখ্যা করেছেন, মোহাম্মদ আজম সেখানে উল্লেখ্য করেছেন যে ছফার অনুসৃত ধারণাকাঠামোর মর্মগত ত্রুটির কারণেই ছফার হাতে বাঙালি মুসলমানের আত্মসমালোচনা গিয়ে ঠেকেছে অপরায়নে। এই ধারণাকাঠামো প্রয়োগের জন্যই বাঙালি মুসলমানের ইতিহাস প্রণয়নে একটা সংকট বিদ্যমান বলে তিনি দাবি করেন।


উল্লিখিত দুজনের আলোচনার মধ্যে দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাওয়া যায় - ফারুক ওয়াসিফ উল্লেখ্য করেছেন যে, আব্দুল ওদুদ, বদরুদ্দিন উমর থেকে নিয়ে আনিসুজ্জামানসহ প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবিরা বাঙালি মুসলমানের মন নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ মধ্য দিয়ে এই জনগোষ্ঠীর তুলনামূলক পশ্চাৎপদতার কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা করেছেন। আর এই ধারায় আহমদ ছফার নিজের হীনমন্যতার কারণেই তার হাতে বাঙালি মুসলমান সমাজ একটা পতিত জাতি হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। অন্যদিকে মোহাম্মদ আজম লক্ষ্য করেছেন এই বিশ্লেষকদের ব্যবহৃত ধারণা-কাঠামোর দিকে, যেকারণে এদের রচনায় বাঙালি মুসলমান অনিবার্যভাবেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের মধ্যে “অপর” হিসেবে দেখা দেয়। অর্থাৎ, বাঙালি মুসলমানের বিষয়ক আলোচনায় প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবীদের নিজেদের মধ্যেই মুসলমান হিসেবে এক ধরনের হীনমন্যতা ছিল, এবং তারা যে চিন্তাকাঠামো (Framework) অনুসরণ করে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন, সেটাই বাঙালি মুসলমানকে অপরায়নের জন্য দায়ী।


আমার সম্প্রতি প্রকাশিত “বাঙালি মুসলমান প্রশ্ন” বইয়ে Discourse Analysis কাঠামোর মধ্যে আমি বিস্তারিত আলোচনা করে দেখিয়েছি যে, বাঙালি মুসলমান সমাজের যে চিত্রটা ছফা অঙ্কন করেছেন তা’ আগে থেকেই বাংলাদেশের বিদ্যাজগতে জারি ছিল। ছফা শুধু তার শক্তিশালী রচনা শৈলীর মাধ্যমে সেটা জনপ্রিয় করে গণমানুষের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আমার এই দাবীর পক্ষে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছি অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বীকৃত গবেষণাগ্রন্থ “মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য” [১৬]। এই গ্রন্থের পর্যালোচনা করে মুসলমান সমাজের যে চিত্র পাওয়া যায় তার তিনটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিলঃ


১। মুসলমান সাহিত্যিকরা সমসাময়িক হিন্দু সাহিত্যিকদের তুলনায় ইতিহাসবিমুখ এবং সামাজিক পরিবর্তনকে ধারণ করতে অক্ষম এবং অনিচ্ছুক,

২। আধুনিকতার ছোঁয়ায় হিন্দু সাহিত্যিকরা মধ্যযুগীয় সাহিত্য থেকে (অতিপ্রাকৃত, কল্পকাহিনি, ধর্মীয় কাহিনি ইত্যাদি) সরে গিয়ে সমাজের দৈনন্দিন জীবন ও বাস্তবতাকে উপজীব্য করে সাহিত্যসাধনায় ব্রতী হয়েছে, তথা প্রগতির পথে হেঁটেছে। কিন্তু মুসলমান সাহিত্যকিরা হিন্দুদের প্রতি উগ্র সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও বিদ্বেষবশত তাদেরকে এড়িয়ে যাওয়ার নিমিত্তে অতীত কালে, এমনকি বাংলার বাইরে ইরান-আরবের সমাজের কল্পকাহিনিতে ফিরে গেছে এবং

৩। মুসলমান সাহিত্যিকরা কখনো কখনো হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেও শেষ বিচারে তারা অনিবার্যভাবেই হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন থেকেছে।


আনিসুজ্জামানের এই গবেষণার মধ্যে আমি ওরিয়েন্টালিস্ট বৈশিষ্ট্য লক্ষ করি। ওরিয়েন্টালিস্ট গবেষণা যেমন ক্ষমতাহীন সমাজ বা জনগোষ্ঠীকে পাঠ করতে গিয়ে আংশিক তথ্যের ভিত্তিতে সেই সমাজ বা গোষ্ঠীর বিষয়ে আগে থেকেই প্রচলিত নেতিবাচক পূর্ব-অনুমান (Stereotype) পুনরুৎপাদন করে, আনিসুজ্জামানের এই গবেষণার মধ্যে তা স্পষ্ট। সাহিত্যের বিচারের মধ্য দিয়ে মুসলমান সাহিত্যিকদের চিন্তাধারার অনুসন্ধানের লক্ষ্যে আনিসুজ্জামান গবেষণা শুরু করেছেন (পৃষ্ঠা : ২৬), কিন্তু তার বিশ্লেষণে সমসাময়িক সমাজের সামগ্রিক রূপ অনুপস্থিত। যেমন, তিনি গাজী মিয়াঁর বস্তানী রচনায় মীর মশারফ হোসেনের মধ্যে “উগ্র স্বাতন্ত্র্যপন্থী মুসলমান” রূপান্তর লক্ষ্য করেছেন (পৃষ্ঠা : ১৯৮)। এই রচনায় যে সমাজ সমালোচনা আছে, তা নিরপেক্ষ নয় বলেও তিনি মত দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এই রচনাটির মধ্যে ২৪ বছর আগে বঙ্কিমচন্দ্রের রচিত কমলাকান্তের দপ্তর (১৮৭৫) রচনার প্রেরণা ছিল। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র এবং অন্য হিন্দু সাহিত্যিকদের রচনার মধ্যে যে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং শিক্ষিত হিন্দু সমাজের সহিংস হিন্দু জাতীয়তাবাদী (যা স্বদেশি নামে পরিচিত) আন্দোলনকেও আনিসুজ্জামান বেমালুম পাশ কাটিয়ে গেছেন, যেগুলো অনিবার্যভাবেই মীর মশারফ হোসেনের মুসলমান স্বাতন্ত্র্যবাদী হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে হাজির ছিল।


বাংলা সাহিত্যের আলোচনার পাশাপাশি জ্ঞানচর্চার অন্যান্য ক্ষেত্রেও মূলধারার গবেষকদের মধ্যে বাঙালি মুসলমান সমাজ পাঠে এই ওরিয়েন্টালিস্ট প্রবণতা লক্ষণীয়। যেমন, মার্ক্সিস্ট ঘরানার প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের রচিত ‘বাঙালি মুসলমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ প্রবন্ধে তিনি বাঙালি মুসলমান সমাজকে অনগ্রসর, অশিক্ষিত, আরব-ইরানমুখী এবং হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষপোষণকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন [১৭]। একইভাবে সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবউদ্দীন আহমেদও [১৮] বাঙালি মুসলমানদের জাতিসত্তাগত পরিচয় নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধের উপসংহার টেনেছেন তাদের মধ্যকার ছ্যাঁচ্চোর (Lumpen) স্বভাবের উল্লেখ দিয়ে।


অর্থাৎ, আহমদ ছফার প্রবন্ধে বাঙালি মুসলমান সমাজের প্রতি তার যে বিরাগের বহিঃপ্রকাশ দেখি, তার মূলে আছে বিদ্যাজগতে এই সমাজকে নিয়ে প্রচলিত ওরিয়েন্টালিস্ট জ্ঞানচর্চার ধারা। এডওয়ার্ড সাইদ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করছেন কীভাবে বিদ্যমান ওরিয়েন্টালিজম সময়ের সর্বাপেক্ষা সামর্থ্যবান গবেষকের দৃষ্টিকেও সীমিত করে ফেলে এবং ফলত গবেষণার মাধ্যমে চলমান নেতিবাচক পূর্ব-অনুমানকেই (Stereotype) পুনরুৎপাদন করে। এজন্য সমাজ গবেষক হিসেবে স্বীকৃত অন্যদের মধ্যেও একইভাবে ওরিয়েন্টালিস্ট ধ্যানধারণাকে বিনা প্রশ্নের গ্রহণ এবং পুনরুৎপাদন করতে দেখা যায়। যেমন, আলী রিয়াজের গবেষণাগ্রন্থ Faithful Education (২০০৮) যেখানে তিনি দাবি করেছেন যে, মাদরসাশিক্ষা বাস্তব জগতের নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার যোগ্যতাসম্পন্ন ইসলামি স্কলার তৈরি করতে ব্যর্থ, এবং এটি ইসলামের একটা সংকীর্ণ ও গোঁড়া মতবাদের শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে অসহিষ্ণুতা ও জঙ্গিবাদের জন্ম দেয়। কিন্তু তার ব্যবহৃত তথ্য সমগ্র মাদরাসাশিক্ষা ব্যবস্থার অপ্রতিনিধিত্বশীল (Non-representative) একটা খণ্ডিত অংশমাত্র, যার ভিত্তিতে তিনি সমগ্র মাদরাসাশিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য জ্ঞানার্জনের দাবি করেছেন। আমরা জানি, ওরিয়েন্টালিস্ট জ্ঞানচর্চা বাস্তবতাকে বিকৃত করে উপস্থাপন করে এবং ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠীকে অপরায়ন (Othering) করার মধ্য দিয়ে নানা রকম কুধারণার (Stereotype) জন্ম দেয়, যেগুলো তাদের ওপর চলমান অন্যায়, অবিচার আর আধিপত্যকে প্রয়োজনীয় (Necessary) এবং অনিবার্য (Inevitable) হিসেবে উপস্থাপন করে। একে আন্তনীয় গ্রামসির বরাতে হেজেমনি বলা যেতে পারে। পাঠ্যসূচি, সমাজ গবেষণা, রাজনৈতিক কর্মসূচি, মিডিয়া প্রোপাগান্ডা ইত্যাদির মাধ্যমে বিদ্যমান নেতিবাচক পূর্বধারণাগুলো আমাদের স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধিকে এমনভাবে আবদ্ধ করে রাখে যে, গবেষক বা লেখক সেইসব নেতিবাচক পূর্বধারণাকেই (Stereotype) ক্রমাগত পুনরুৎপাদন করে চলে। এমনকি লেখক/গবেষক সচেতনভাবে মুসলমানবিদ্বেষী না হয়েও অথবা মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া সত্ত্বেও একই ধারা অনুসরণ করেন। যেমন, প্রয়াত সৈয়দ আবুল মকসুদ একটি প্রবন্ধে লিখেছেন : "বাঙালি মুসলমান ভাগ্য-বিড়ম্বিত তার নিজের স্বভাব-দোষে, ভাগ্যচক্রে এবং অন্যের কারণেও। বারবার হয়েছে সে ভাগ্য-বিড়ম্বনার শিকার।" প্রথম দেখায় বাক্যটিতে মুসলমান সমাজের জন্য সহমর্মিতায় পূর্ণ মনে হলেও আসল কথাটা কিন্তু একেবারে সোজা—বাঙালি মুসলমান যে ঐতিহাসিকভাবে পিছিয়ে-পড়া একটা জনগোষ্ঠী/সম্প্রদায়, তার দায় এই মুসলমানদেরই। নিজেদের অশিক্ষা, প্রগতির পথে চলায় অক্ষমতা, রক্ষণশীলতা ইত্যাদিই তাদের ভাগ্য বিড়ম্বনার জন্য দায়ী। যেন তাদের ওপর জমিদারি ব্যবস্থা চেপে বসেছিল না, যেন ইংরেজ কলোনিয়াল শোষণ ছিল না, যেন তাদেরকে শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতিতে বঞ্চিত করা হয়নি [১৯]।


ওরিয়েন্টালিস্ট জ্ঞান নিশ্চয়ই অগ্রহণযোগ্য এবং পরিত্যাজ্য। পেশাগত গবেষকদের মধ্যে বিদ্যমান ওরিয়েন্টালিস্ট ধারা সহজেই চিহ্নিত করা যায়, বিশেষ করে মিশেল ফুকো আর এডওয়ার্ড সাইদের ব্যাখ্যার অনুসরণে।১৯ কিন্তু শিক্ষিত জনসাধারণের মাঝে এই ধারার জ্ঞান কীভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়?—এই ঘটনাটি ঘটে নিজেদের সম্পর্কে যাবতীয় নেতিবাচক ধারণাগুলোকে (Stereotype) ক্রমাগত আত্মস্থ (Internalize) করার মাধ্যমে সঠিক এবং বাস্তব বলে বিশ্বাস করার মধ্য দিয়ে [২০]। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ইসলামের সাথে জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত ধ্যানধারণা দিয়েই বিষয়টা ব্যাখ্যা করি।


কিছুদিন আগে এক নিকট আত্মীয়ের সাথে ফোনে কথা বলছিলাম। বাড়িতে বছর নয়-দশের একটা ছেলে আছে। কথা প্রসঙ্গে আমার আত্মীয় বলল, করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ বিধায় ওকে স্থানীয় এক গানের ওস্তাদের কাছে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। কারণ হিসেবে বলল যে, গান-বাজনা শেখানোর দরকার আছে। এতে তার মনের সুকুমার বৃত্তিগুলোর বিকাশ ঘটবে এবং বড় হয়ে সে ধর্মীয় উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকবে না। ‘ইসলামধর্ম সন্ত্রাসবাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং গান-বাজনা চর্চার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির মধ্যে ইসলামের প্রতি নমনীয়তা আসবে যা তাকে ধর্মীয় উগ্রবাদ থেকে দূরে রাখবে’—এই অনুমানটা শিক্ষিত, শহুরে, পেশাজীবী এবং সংস্কৃতিমনস্ক হিসেবে পরিচিত পরিবারের লোকজনের মধ্যকার ব্যাপার বলে সাধারণভাবে দেখা যায় [২১]। কিন্তু মফস্বলবাসী, ধর্মানুরাগী আমার সেই আত্মীয়ের মধ্যেও একই অনুমান দেখে ভাবতে বসলাম যে, এটা কীভাবে ঘটল? নিজে ইসলামধর্মে ঈমান এবং আমলের মধ্যে থেকেও কত অনায়াসেই এমন অনুমানটা আত্মস্থ করে বসে আছে।

আগেই উল্লেখ করেছি যে, মাদরাসাশিক্ষা থেকে ধর্মীয় উগ্রবাদের জন্ম নেওয়ার দাবিটা আদতে একটা ওরিয়েন্টালিস্ট অনুমান। ‘মাদরাসামাত্রই জঙ্গিবাদের জন্ম দেয়’—এই কুধারণা জনসাধারণের মানসে প্রবেশ করে গবেষক-শিক্ষক-লেখক-আলোচকদের ক্রমাগতভাবে সক্রিয় লেখালেখি-বিতর্ক-আলোচনা ও প্রকাশনার মধ্য দিয়ে গ্রহণযোগ্য জ্ঞানের আকারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা আমার সেই আত্মীয়ের মতো আরও অনেক মুসলমানই জঙ্গিবাদে মাদরাসার ভূমিকাবিষয়ক অনুরূপ অন্ধবিশ্বাস পোষণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মাদরাসার ছাত্রদের তুলনামূলকভাবে অধিক সাফল্য নিয়ে যে আলোড়ন দেখি, সেটাও এই নেতিবাচক পূর্বধারণার কারণে যে, ‘মাদরাসার ছাত্ররা চরিত্রগতভাবেই দুর্বল এবং জেনারেল ধারার শিক্ষার জন্য অনুপযুক্ত’।


বাংলাদেশে মাদরাসাশিক্ষা নিয়ে মূলধারায় জ্ঞানচর্চা এবং তার ভিত্তিতে নানা রকম সামাজিক ও রাজনৈতিক নীতিমালার প্রণয়নে দেখা যায় জেনারেল মাধ্যমে শিক্ষিত স্কলারদেরকে, যারা নিজেদেরকে মাদরাসায় শিক্ষিতদের তুলনায় জ্ঞানের বিচারে অধিক সক্ষম হিসেবে বিশ্বাস করে এবং এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা থেকে শুরু করে চাকুরিতে নিয়োগ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে। আর মাদরাসায় শিক্ষিতরা যে সমাজের অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে-পড়া এই অনুমান এবং এর ভিত্তিতে মাদরাসার ছাত্রদের সাথে বর্ণবাদী আচরণ সামগ্রিকভাবে সামাজের অন্যান্য দলের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষয়ে আহসান হাবীব নামের এক তরুণ সমাজবিজ্ঞানীর মন্তব্য উল্লেখযোগ্য। তিনি লিখেছেন :

“আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একধরনের ‘বর্ণপ্রথা’ বিদ্যমান। যেখানে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ মাদরাসাকে দেখেন নিম্নবর্ণের শিক্ষামাধ্যম হিসেবে। এরা মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মনে করেন অচ্ছুত ও নিকৃষ্ট জীব হিসেবে। যেমনটা একসময় উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণরা নিচুবর্ণের তথা শূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষদের মনে করত” [২২]।


কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো এই যে, মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যেও অনেকে তাদের সম্পর্কিত নেতিবাচক পূর্বধারণাগুলো সঠিক মনে করে। যেমন, আমার কাছের বন্ধুদের মধ্যে মাদরাসা থেকে পাশ করা কেউ কেউ নিজেদেরকে ইংরেজিতে দুর্বল মনে করত এবং পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হওয়ার জন্য নিজেদের অক্ষমতাকে দায়ী করত। এটি অবশ্যই বর্ণবাদ, কিন্তু আমাদের বোঝাবুঝি অনুযায়ী বর্ণবাদের থেকে আলাদা। এটি আসলে এই নিবন্ধের শুরুতে বর্ণিত আত্মস্থ বর্ণবাদ, যেখানে একই ব্যক্তি বর্ণবাদী এবং বর্ণবাদের শিকার।


একইভাবে ইসলাম যে উগ্রবাদের জন্ম দেয় এবং গান-বাজনা তথা অ-ইসলামি সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে ইসলামের অনিবার্যভাবে এই ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানোর চেষ্টা করতে হবে বলে আমার মুসলমান আত্মীয় যে বিশ্বাস পোষণ করে, এবং সেই বিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সন্তানকে গান শিখতে পাঠায়, এটিও আদতে আত্মস্থ বর্ণবাদ। এই বর্ণবাদ তাকে নিজের ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি আত্মঘৃণার জন্ম দেয়, যার ফলে সে সচেতনভাবে নিজের ধর্ম ও সম্প্রদায়গত পরিচয়কে পরিত্যাগ করে সমাজে গ্রহণযোগ্য আরেকটি পরিচয় (সংস্কৃতিমনা) অর্জনের প্রয়াস পেয়েছে। অনুরূপ দৃষ্টান্ত প্রায়শই দেখা যায় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মাদরাসার ছাত্রদের কেউ কেউ ইসলামের থেকে যথাযম্ভব দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে মূলধারায় প্রবেশের চেষ্টার মধ্যে, গ্রামীণ কৃষিজীবী পরিবার থেকে শহরে এসে প্রাণপণে শেকড়ের থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে নাগরিক হয়ে ওঠার চেষ্টার মধ্যে। সাধারণভাবে এই বিষয়কে আমরা “জাতে ওঠা” বলে অভিহিত করি।


একই ধারার অনুসরণ করে বলা যায় যে, “বাঙালি মুসলমানের মন” প্রবন্ধে মুসলমান সমাজের প্রতি বিদ্যমান কুধারণাগুলোকে বিনা প্রশ্নে সঠিক হিসেবে বলে গ্রহণ করার জন্য আহমদ ছফার আলোচনায় মুসলমান জনগোষ্ঠীর যেসব বৈশিষ্ট্য দেখি, তা বর্ণবাদী। এই প্রবন্ধে বাঙালি মুসলমানের প্রতি ছফার অনুরাগ প্রবল। কিন্তু একই সাথে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই জনগোষ্ঠীর পিছিয়ে থাকার জন্য এদেরকেই দায়ী করে ছফা এদের প্রতি ক্ষুব্ধ, হতাশ এবং বিরক্তও। বাঙালি মুসলমানের দুর্দশার পেছনে কাঠামোগত কারণসমূহ উপেক্ষা করার কারণে ছফা মনে করেছেন যে, এদের দুর্দশার জন্য এরা নিজেরাই দায়ী। বাঙালি মুসলমানের প্রতি এই যে বর্ণবাদ, এটি সমগ্র বাঙালি মুসলমান সমাজ এবং তাদের একজন হিসেবে ছফার নিজের প্রতি নিজেরই বর্ণবাদ। আর এই বর্ণবাদ কোনোভাবেই ব্যক্তি হিসেবে আহমদ ছফার সচেতন কর্মপ্রয়াস নয়, বরং অবচেতনে বাঙালি মুসলমান সম্পর্কিত কুধারণাগুলোকে বিনা প্রশ্নে আত্মস্থ করার অনিবার্য কুফল।




তথ্যসূত্র

১. “‘Hypocrites’: Bollywood actors slammed over George Floyd stand”, Al Jazeera, 8 June, 2020.

২. Tania M. Golash-boza (2021) Race and Racisms: A critical approach. New York, Oxford: Oxford University Press.

৩. Daniel Sorzano et al., Keeping Race in Place: Racial Microaggressions and Campus Racial Climate at the University of California, Berkeley, 23 Chicano-Latino Law Review 15, 24 (2002).

৪. Golash-boza (2021), প্রাগুক্ত।

৫. Lindsay Perez Huber, Robin Johnson and Rita Kohli (2006). Naming racism: a conceptual look at internalized racism in US schools. Chicana/o-Latina/o Law Review, 26:183- 206.

৬. Padilla, L. M. (2001). But you’re not a dirty Mexican: Internalized oppression, Latinos, and law. Texas Hispanic Journal of Law & Policy, 7: 59-113.

৭. Cokley, K. O. (2002). Testing Cross’s revised racial identity model: An examination of the relationship between racial identity and internalized racialism. Journal of Counseling, Psychology, 49: 476-483.

৮. Wei-Chin Hwang (2021). Demystifying and Addressing Internalized Racism and Oppression Among Asian Americans. American Psychologist, 76(4): 596–610.

৯. “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলাম প্রসঙ্গে আমার ভাবনা” সূত্র- https://cadetcollegeblog.com/mahmudh/37250

১০. সলিমুল্লাহ খান, (২০১৩) [প্রবন্ধের প্রথম প্রকাশকাল ২০০১]। ‘আহমদ ছফার সাধনা’। আহমদ ছফা সঞ্জীবনী। ঢাকা: আগামী প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৩৯–৪৭।

১১. “বাঙালি মুসলমানের মন কি বদলেছে?”, DW পত্রিকা, ৩০ অক্টোবর, ২০২০, https://www.dw.com/bn/বাঙালি-মুসলমানের-মন-কি-বদলেছে/a-55446402

১২. Rahman MM. (2018). Triangular Confluence: Islam and Modernity in Bangladesh. Journal of Asian and African Studies. 53(6):866-879.

১৩. সাত্তার, সরদার আবদুস (২০১৭), বাঙালি মুসলমানের মানসদর্পণ, আহমদ ছফা: আলোকপথের অভিযাত্রী, ঢাকা: সুচয়নী পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ২৭৫–২৯৮

১৪. “আহমদ ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’”, সমকাল, বৈশাখ ১৩৮৩ (এপ্রিল ১৯৭৬), অষ্টাদশ বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা।

১৫. এই আলোচনাটি মোহাম্মদ আজমের “সাংস্কৃতিক রাজনীতি ও বাংলাদেশ” বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে।

১৬. প্রথম প্রকাশ ১৯৬৪ সালে; আর এই আলোচনায় উদ্ধৃতিগুলো ২০১২ সালে মুদ্রিত সংখ্যা থেকে নেওয়া।

১৭. মোহাম্মদ আজম (২০২১), “বাঙালি মুসলমানের ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ : এক হীনম্মন্য মিথের ইতিহাস-ভূগোল”, তত্ত্বতালাশ, ১ম সংখ্যা, জুলাই।

১৮. Ahmed, A. I. Mahbubuddin (2019). The Ethno-class Formation and Contemporary National Identity in Bangladesh. In Mukherji, P. N., Jayaram, N. and Ghosh, B. N. (eds.) Understanding Social Dynamics in South Asia: Essays in Memory of Ramkrishna Mukherjee. Springer.

১৯. বিস্তারিত আলোচনার জন্য পড়ুন, “বাঙালি মুসলমান প্রশ্ন” বইয়ের ২য় অধ্যায়।

২০. Brown, Sellers and Gomez (2002). The relationship between internalization and self-esteem among black Adults. Sociological Focus, 35(1): 55-71.

২১. এই বিষয়ে কোনো একাডেমিক গবেষণা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আমার পরিচিত অনেকের কাছে, বিশেষ করে যারা গান-বাজনা, কবিতা, নাটক ইত্যাদি নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের কাছে অনেকবার এই অনুমান শুনেছি।















766 views1 comment

Recent Posts

See All

‘বাঙালি মুসলমানের মন’: গোঁজামিলের এক জ্ঞানবৃক্ষ

১ জাতীয় পরিচয়ের বিভিন্ন মাত্রা আছে, আছে তার বিবিধ বহিঃপ্রকাশ। মোটাদাগে, জাতীয় পরিচয়ের মধ্যে জড়িয়ে থাকা উপাদানগুলোকে আলাদা করা হয় জাতিসত্তা (ethnic membership) এবং নাগরিকতার পরিচয়ের (political membersh

bottom of page